খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৮ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ জনের মৃত্যু, আহত ৩০
  মুন্সীগঞ্জে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা, আটক ৩

অপহরণ নাটক : সেই রহিমা বেগমসহ তিন মেয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

একরামুল হোসেন লিপু

২০২২ সালে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো রহিমা বেগম অপহরণ। আসলে ঘটনাটি ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো। খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিকপাড়া খানাবাড়ী এলাকার নিজ বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয় বলে নাটক সাজানো হয়। কথিত অপহরণের এ সাজানো মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে এখন ফেঁসে যাচ্ছেন মা এবং তিন কন্যা। অপহরণের মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া মোঃ রফিকুল আলম পলাশ বাদি হয়ে কথিত অপহরণ মামলার বাদি রহিমা বেগমের কন্যা আদুরী আক্তার (২২), ভিকটিম রহিমা বেগম (৫২), অপহরণ নাটকের মাস্টারমাইন্ড রহিমা বেগমের আরেক কন্যা মরিয়ম মান্নান (২৮) এবং মরিয়ম মান্নানের বড় বোন কানিজ ফাতেমা (৩২) ‘র নামে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল- ২ এ গত ২৬ জুন মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা নং ৮৬/২০২৪। বিজ্ঞ আদালত মামলার শুনানি শেষে ২৭ জুন আসামি ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাডঃ পারভেজ আলম খান জানিয়েছেন।

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে এ অপহরণ ছিলো একটা পরিকল্পিত সাজানো নাটক। যেটা পিবিআই এবং সিআইডি’র তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আর সাজানো এ নাটকের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন রহিমা বেগমের ২৮ বছর বয়সী কন্যা মরিয়ম মান্নান। তার পরিকল্পনায় মা রহিমা বেগমকে অপহরণ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে নিজেদের আবেগ আর অনুভূতি কাজে লাগিয়ে দেশবাসী এবং পুলিশ প্রশাসনের সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হন।

এরই ধারাবাহিকতায় রহিমা বেগমের আরেক কন্যা ২২ বছর বয়সী আদুরী আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭ ও ৩০ ধারা মোতাবেক দৌলতপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫। তাং ২৭/৮/২০২২। মামলায় আসামি করা হয় জমিজমা নিয়ে বিরোধ প্রতিবেশী মোঃ কিবরিয়া তার ভাই মহিউদ্দিন, মোঃ রফিকুল আলম পলাশ তার ভাই জুয়েল এবং রহিমা বেগমের সাবেক স্বামী মোঃ হেলাল শরীফ ও বেল্লাল হাওলাদারকে।

অপহরণ নাটকের এক মাস পর ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুর জেলার বোয়ালিয়াচর থানার সৈয়দপুর থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন দৌলতপুর থানার এস আই মোঃ লুৎফুল হায়দার। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শেষে পিবিআই ‘র ইন্সপেক্টর মোঃ আঃ মান্নান ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পুরো বিষয়টি সাজানো উল্লেখ করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে জানান, বাদি ও তার বোন মরিয়ম মান্নান রহিমা বেগমসহ পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা অপহরণ নাটক সাজিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

পিবিআই’র দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী আদুরী আক্তার আদালতে নারাজি আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি খুলনাকে নির্দেশ দেন। মামলাটির দায়িত্বভার সিআইডি নেওয়ার পর সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোঃ রবিউল ইসলাম ৬ মাস মামলাটি তদন্ত শেষে অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা উল্লেখ করে আদালতে সম্পূরক চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন।

রহিমা অপহরণ মামলার মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম মান্নানসহ তার মা এবং অপর দুই বোনের নামে সম্প্রতি আদালতে দায়ের করা মামলার বাদী মোঃ রফিকুল আলম পলাশ খুলনা গেজেটকে বলেন, আমার সঙ্গে রহিমা বেগম কিংবা তার পরিবারের অন্য সদস্যদের জমিজমা নিয়ে কোন বিরোধ ছিলো না । বিভিন্ন সময়ে রহিমা বেগম এবং তার কন্যাদের বিভিন্ন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছি। এ কারণে উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়ে তারা আমাকে অপহরণ মামলায় আসামি করে হয়রানি করেছে । অপহরণ নাটক সাজিয়ে আমাদেরকে আসামি বানিয়ে ওই মামলায় দেড় বছর হয়রানি হয়েছি, জেল খেটেছি। শুধু আমরা নয় পুরো দেশবাসী এবং পুলিশ প্রশাসনকে তারা হয়রানি করেছে। প্রতারণা এবং মিথ্যাচার করার জন্য এদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। এদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে এ শাস্তি দেখে আর কেউ এভাবে কারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ না করতে পারে।

তিনি বলেন, রহিমা অপহরণ নাটকের ভিকটিম রহিমা বেগমের অভ্যাস হলো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো। এর আগেও তিনি প্রতিবেশীদের অনেককে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন। এ কারণে এলাকার মানুষ তাদের উপর অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান একজন নারীবাদী নেত্রী। তিনি একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে তার বাবা আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। এ সময় এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। পাস করার পরে চলে যান রাজধানী ঢাকায়। সেখান থেকে শুরু হয় তার উশৃঙ্খল জীবন-যাপন। ঢাকায় যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এক ডেন্টাল চিকিৎসকের সঙ্গে। পরে তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করেন বরিশাল জেলায়। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনজনরা তেমন কিছুই জানেন না।

দৌলতপুর থানা সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবোনাল- ২ এ কথিত রহিমা বেগম অপহরণ মামলার বাদী আদুরী আক্তার, অপহরণ নাটকের মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম মান্নান, ভিকটিম রহিমা বেগম ও তার বড় মেয়ে কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ওয়ারেন্ট কপি এখনও থানায় এসে পৌঁছায়নি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!